প্রিয় পাঠক, আসসালামু আলাইকুম। আশা করি, আপনারা সবাই আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। এর আগের পোস্টে আমরা— “নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত সমূহ” সম্পর্কে জেনেছিলাম। আজকে আমরা— নামাজের ফরজ কয়টি ও কী কী; এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। যেহেতু নামাজ একজন মুসলিমের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, আমাদের সকলের নামাজের ফরজগুলো সম্পর্কে সঠিকভাবে জানা প্রয়োজন। অন্যথায় আমাদের নামাজ সঠিক হবে না, আমরা সওয়াবের বদলে গুনাহর ভাগীদার হব। তাই চলুন, বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
নামাজের ফরজ কয়টি ও কী কী
নামাজের ফরজকে রুকনও বলা হয়। রুকন মানে হলো স্তম্ভ। এগুলি অপরিহার্য ব্যাপার। যেগুলো নামাজ পড়ার সময় ইচ্ছাকৃতভাবে বা ভুলে বাদ পড়লে নামাজ / সালাত বাতিল হয়ে যাবে। নামাজের ফরজ বা রুকন ৭টি। এগুলো হলো—
(১) কিয়াম বা দাঁড়ানো
“আল্লাহ বলেন, আর তোমরা আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠ চিত্তে দাঁড়িয়ে যাও।” (আল কোরান : সূরা বাক্বারা ২/২৩৮)
আরও পড়ুন: কম কথা বলার উপকারিতা এবং হাদিসের বার্তা!
(২) তাকবীরে তাহরীমা পড়া
এর মানে হলো ‘আল্লাহু আকবর’ বলে দুই হাত কাঁধ অথবা কান পর্যন্ত উঠানো। আল্লাহ বলেন, তোমার প্রভুর জন্য তাকবীর দাও। (আল কোরান : সূরা মুদ্দাসসির ৭৪/৩)। অর্থাৎ তার বড়োত্ব ঘোষণা করো। রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, “নামাজের জন্য সবকিছু হারাম হয় তাকবীরের মাধ্যমে এবং সবকিছু হালাল হয় সালাম ফিরানোর মাধ্যমে।” (আবু দাউদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৩১২)
(৩) সূরায়ে ফাতিহা পাঠ করা
রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, “ওই ব্যক্তির নামাজ সিদ্ধ নয়, যে ব্যক্তি সূরায়ে ফাতিহা পাঠ করে না।” (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৮২২)
(৪) রুকু করা
“আল্লাহ বলেন, হে মুমিনগণ! তোমরা রুকু করো ও সিজদা করো।” (আল কোরান : সূরা হজ্জ ২২/৭৭)
(৫) সিজদা করা
“আল্লাহ বলেন, হে মুমিনগণ! তোমরা রুকু করো ও সিজদা করো।” (আল কোরান : সূরা হজ্জ ২২/৭৭)
⏩ আরও পড়ুন: SSC Result 2024 All Education Board
(৬) তাদীলে আরকান বা ধীর-স্থির ভাবে নামাজ আদায় করা
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, জনৈক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে নামাজ আদায় শেষে রাসূলুল্লাহ (সা:)-কে সালাম দিলে তিনি তাকে সালামের জওয়াব দিয়ে বলেন, তুমি ফিরে যাও এবং সালাত / নামাজ আদায় করো। কেন না তুমি সালাত / নামাজ আদায় করোনি। এভাবে লোকটি তিনবার সালাত / নামাজ আদায় করল ও রাসূলুল্লাহ (সা:) তাকে তিনবার ফিরিয়ে দিলেন। তখন লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল (সা:)! যিনি আপনাকে সত্য সহকারে প্রেরণ করেছেন, তাঁর কসম করে বলছি, এর চাইতে সুন্দরভাবে আমি সালাত / নামাজ আদায় করতে জানি না। অতএব দয়া করে আপনি আমাকে সালাত / নামাজ শিখিয়ে দিন! (অতঃপর তিনি তাকে ধীরে-সুস্থে সালাত / নামাজ আদায় করা শিক্ষা দিলেন)। (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৭৯০, ‘সালাতের বিবরণ’ অনুচ্ছেদ-১০)
(৭) কাদায়ে আখিরাহ বা শেষ বৈঠক এ বসা
হযরত উম্মে সালামা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর যামানায় মহিলাগণ জামাতে ফরজ নামাজ শেষে সালাম ফিরানোর পরে উঠে দাঁড়াতেন এবং রাসূলুল্লাহ (সা:) ও পুরুষ মুসল্লিগণ কিছু সময় বসে থাকতেন। অতঃপর যখন রাসূলুল্লাহ (সা:) দাঁড়াতেন তখন তারাও দাঁড়াতেন। (বুখারী, মিশকাত হা/৯৪৮ তাশাহুদে দোয়া অনুচ্ছেদ-১৭) এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, শেষ বৈঠকে বসা এবং সালাম ফিরানােটাই ছিল রাসূলুল্লাহ (সা:) ও ছাহাবায়ে কেরামের নিয়মিত সুন্নত।
আরও পড়ুন: ইসলামে স্বামী-স্ত্রী সহবাসের সম্পূর্ণ নিয়ম ও পদ্ধতি!
উল্লেখ্য, কঠিন অসুখ বা অন্য কোনো বাস্তব কারণে অপারগ অবস্থায় উপরোক্ত শর্তাবলী ও রুকন সমূহ ঠিকমত আদায় করা সম্ভব না হলে বসে বা শুয়ে ইশারায় নামাজ আদায় করবে। (বুখারী; মিশকাত হা/১২৪৮)। কিন্তু জ্ঞান থাকা পর্যন্ত কোনো অবস্থায় নামাজ মাফ নেই।
**********
প্রিয় পাঠক, এই ছিল— নামাজের ফরজ কয়টি ও কী কী; এই সম্পর্কে বিস্তারিত। আশা করি, লেখাটি আপনাদের ভালো লেগেছে। ভালো লাগলে দ্বীনি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। আর আপনারা প্রতিদিন নিয়ম মেনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ুন। আল্লাহ আপনাদের সবাইকে হেদায়েত দিক, আমিন। আর নিয়মিত ইসলামিক পোস্ট পড়তে হাদিস ঘর সাইটে চোখ রাখুন। জাযাকাল্লাহ খাইরান।