প্রিয় পাঠক, আসসালামু আলাইকুম। আশা করি, আপনারা সবাই আল্লাহপাকের অশেষ রহমতে ভালো আছেন। পাঠক, আপনারা জানেন যে, একজন মুসলিম হিসেবে ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো সালাত কিংবা নামাজ। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে সালাত কিংবা নামাজ হলো অন্যতম এবং কালেমার পরেই এর অবস্থান। তো, বুঝতেই পারছেন, নামাজের অশেষ গুরুত্ব ও ফজিলত রয়েছে। আজকে আমরা কোরান-হাদিসের আলোকে সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। চলুন শুরু করা যাক।
নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত সমূহ
নামাজের গুরুত্ব
- “নামাজ বা সালাত হলো ইসলামের শ্রেষ্ঠতম ইবাদত, যা মিরাজের রাত্রিতে ফরয হইয়েছিল।” (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৫৮৬২-৬৫ ‘ফাযায়েল ও শামায়েল’ অধ্যায়-২৯, মিরাজ অনুচ্ছেদ-৬)
- “নামাজ একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা ৭ বছর বয়স থেকেই আদায়ের অভ্যাস করতে হয়।” (আবু দাউদ হা/২৪৭, মিশকাত হা/৫৭২ সালাত’ অধ্যায়-৪, পরিচ্ছেদ-২)
- পবিত্র কোরানে সর্বাধিক বার আলোচিত বিষয় হল নামাজ কিংবা সালাত। আল কোরানে প্রায় ৮২ বার সালাত / নামাজের আলোচনা এসেছে।
- “মুমিনের জন্য সর্বাবস্থায় পালনীয় ফরজ হলো নামাজ, যা অন্য ইবাদতের বেলায় হয়নি।” (আল কোরান: সূরা বাক্বারা ২/২৩৮-৩৯; সূরা নিসা ৪/১০১-০৩।)
- “দুনিয়া থেকে ‘নামাজ / সালাত’ বিদায় নেবার পরেই কিয়ামত হবে।” (আহমাদ, সহিহ ইবনে হিব্বান; আলবানী, সহিহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫৬৯; আলবানী, সহিহ জামে ছাগীর হা/৫০৭৫, ৫৪৭৮।)
- “দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত হিসেবে সালাত / নামাজকে ফরজ করা হয়েছে, যা অন্য কোনো ফরজ ইবাদতের বেলায় করা হয়নি।” (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মুসলিম, মিশকাত হা/৫৮৬২-৬৫ ‘মিরাজ’ অনুচ্ছেদ; নিসা ৪/১০৩।)
- “জাহান্নামী ব্যক্তির লক্ষণ এই যে, সে নামাজ বিনষ্ট করে এবং প্রবৃত্তির পূজারী হয়!” (আল কোরান: সূরা মারইয়াম ১৯/৫৯)
- “মৃত্যুকালে রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর সর্বশেষ অসিয়ত ছিল ‘নামাজ ও নারী জাতি’ সম্পর্কে।” (ইবনে মাজাহ হাদিস নং ২৬৯৮)
- “কালেমায়ে শাহাদাত পাঠ করার পরেই ইসলামে সালাতের স্থান।” (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১৭৭২ যাকাত’ অধ্যায়-৬, পরিচ্ছেদ-১)
- “নামাজ ইসলামের প্রধান স্তম্ভ যা ব্যতীত ইসলাম টিকে থাকতে পারে না।” (আহমাদ, তিরমিযি, মিশকাত হাদিস নং ২৯ ঈমান অধ্যায়)
- “সালাতের বিধ্বস্তি জাতির বিধ্বস্তি হিসেবে পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে।” (আল কোরান: সূরা মারইয়াম ১৯/৫৯)
- “ইসলামের প্রথম যে রশি ছিন্ন হবে, তা হলো তার শাসন ব্যবস্থা এবং সর্বশেষ যে রশি ছিন্ন হবে তা হলো সালাত / নামাজ।” (আহমাদ, সহিহ ইবনে হিব্বান; আলবানী, সহিহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫৬৯; আলবানী, সহিহ জামে ছাগীর হা/৫০৭৫, ৫৪৭৮।)
- “কিয়ামতের দিন বান্দার সর্বপ্রথম হিসাব নেওয়া হবে তার সালাত / নামাজের। সালাতের হিসাব সঠিক হলে তার সমস্ত আমল সঠিক হবে। আর সালাতের হিসাব বেঠিক হলে তার সমস্ত আমল বরবাদ হবে।” (তাবারানী আওসাত, সহিহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৩৬৯, সিলসিলা ছহিহাহ হা/১৩৫৮; আবুদাউদ হা/৮৬৪-৬৬; নাসাঈ, তিরমিযী, মিশকাত হা/১৩৩০ সালাতুত তাসবীহ’ অনুচ্ছেদ-৪০।)
- “মুমিন ও কাফের-মুশরিকের মধ্যে পার্থক্য হলো নামাজ / সালাত।” ( মুসলিম হাদিস নং ১৩৪)
- “ইবরাহীম (আঃ) আল্লাহর নিকট নিজের জন্য ও নিজ সন্তানদের জন্য নামাজ কায়েমকারী হওয়ার প্রার্থনা করেছিলেন।” (আল কোরান: সূরা ইবরাহীম ১৪/৪০)
আরও পড়ুন: ইসলামে স্বামী-স্ত্রী সহবাসের সম্পূর্ণ নিয়ম ও পদ্ধতি!
নামাজের ফজিলত সমূহ
- আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা:) এরশাদ করেন যে, আল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি আমার কোনো প্রিয় বান্দার সাথে দুশমনী করল, আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দিলাম। আমি যেসব বিষয় ফরজ করেছি, তার মাধ্যমে আমার নৈকট্য অনুসন্ধানের চেয়ে প্রিয়তর আমার নিকটে আর কিছু নেই। বান্দা বিভিন্ন নফল ইবাদতের মাধ্যমে সর্বদা আমার নৈকট্য হাসিলের চেষ্টায় থাকে, যতক্ষণ না আমি তাকে ভালবাসি। অতঃপর যখন আমি তাকে ভালোবাসি, তখন আমিই তার কান হয়ে যাই যা দিয়ে সে শ্রবণ করে। চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দর্শন করে। হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধারণ করে। পা হয়ে যাই, যার সাহায্যে সে চলাফেরা করে। যদি সে আমার নিকটে কোনো কিছু প্রার্থনা করে, আমি তাকে তা দান করে থাকি। যদি সে আশ্রয় ভিক্ষা করে, আমি তাকে আশ্রয় দিয়ে থাকি। (সহিহ বুখারী হা/৬৫০২)
- রাসূলুল্লাহ (সা:) এরশাদ করেন—
(ক) যে ব্যক্তি ফজর ও আছরের সালাত নিয়মিত আদায় করে, সে জাহান্নামে যাবে না। সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (মুসলিম, মিশকাত হা/৬২৪-২৫)(খ) দিবস ও রাত্রির ফেরেশতারা ফজর ও আসরের সালাতের সময় একত্রিত হয়। রাতের ফেরেশতারা আসমানে উঠে গেলে আল্লাহ তাদের জিজ্ঞেস করেন, তোমরা আমার বান্দাদের কী অবস্থায় রেখে এলে? যদিও তিনি সবকিছু অবগত। তখন ফেরেশতারা বলে যে, আমরা তাদেরকে পেয়েছিলাম (আছরের) নামাজ অবস্থায় এবং ছেড়ে এসেছি (ফজরের) নামাজ অবস্থায়। (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৬২৬)। কুরআনে ফজরের সালাতকে ‘মাশহুদ’ বলা হয়েছে। (সূরা ইসরা ১৭/৭৮)। অর্থাৎ ওই সময় ফেরেশতা বদলের কারণে রাতের ও দিনের ফেরেশতারা একত্রিত হয়ে সাক্ষী হয়ে যায়। (তিরমিযী, মিশকাত হা/৬৩৫)(গ) যে ব্যক্তি ফজরের সালাত / নামাজ আদায় করল, সে আল্লাহর জিম্মায় রইল। যদি কেউ সেই জিম্মা থেকে কাউকে ছাড়িয়ে নিতে চায়, তাকে উপুড় অবস্থায় জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (মুসলিম, মিশকাত হা/৬২৭) - তিনি আরও বলেন, যে ব্যক্তি সালাতের হেফাজত করল, সালাত তার জন্য কিয়ামতের দিন নূর, দলিল ও নাজাতের কারণ হবে। (আহমাদ হা/৬৫৭৬)
- রাসূলুল্লাহ (সা:) এরশাদ করেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমা হতে পরবর্তী জুমা এবং এক রমজান হতে পরবর্তী রমজানের মধ্যকার যাবতীয় (সগীরা) গুনাহের কাফফারা স্বরূপ, যদি সে কবিরা গুনাহ সমূহ হতে বিরত থাকে (যা তওবা ব্যতীত মাফ হয় না)। (মিশকাত হাদিস নং ৫৬৪)
- আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “নিশ্চয়ই নামাজ মুমিনকে নির্লজ্জ ও অপসন্দনীয় কাজ সমূহ হতে বিরত রাখে।” (সূরা আনকাবুত ২৯/৪৫)।আবুল আলিয়াহ বলেন, তিনটি বস্তু না থাকলে তাকে নামাজ বলা যায় না।(ক) ইখলাস বা একনিষ্ঠতা, যা তাকে সৎ কাজের নির্দেশ দেয় (খ) আল্লাহ ভীতি, যা তাকে অন্যায় থেকে বিরত রাখে (গ) কুরআন পাঠ, যা তাকে ভাল-মন্দের নির্দেশনা দেয়।আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, একদা জনৈক ব্যক্তি এসে রাসূলুল্লাহ (সা:)-কে বলল যে, অমুক ব্যক্তি রাতে (তাহাজ্জুদের) নামাজ পড়ে। অতঃপর সকালে চুরি করে। জবাবে রাসূলুল্লাহ (সা:) তাকে বলেন, তার রাত্রি জাগরণ সত্বর তাকে ওই কাজ থেকে বিরত রাখবে, যা তুমি বলছো। (সূরা আহমাদ হাদিস নং ৯৭৭৭)
- তিনি বলেন, তােমাদের কারও ঘরের সম্মুখ দিয়ে প্রবাহিত নদীতে দৈনিক পাঁচবার গোসল করলে তোমাদের দেহে কোনো ময়লা বাকী থাকে কি? পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের তুলনা ঠিক অনুরূপ। আল্লাহ এর দ্বারা গুনাহ সমূহ বিদূরিত করেন। (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৫৬৫)
- আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা:) এরশাদ করেন যে, বান্দা যখন সালাতে দণ্ডায়মান হয়, তখন তার সমস্ত গুনাহ হাযির করা হয়। অতঃপর তা তার মাথায় ও দুই স্কন্ধে রেখে দেওয়া হয়। এরপর সে ব্যক্তি যখন রুকু বা সিজদায় গমন করে, তখন গুনাহ সমুহ ঝরে পড়ে। (ত্বাবারাণী, বায়হাক্বী, আলবানী, সহীহুল জামে হা/১৬৭১)
- তিনি বলেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যেগুলিকে আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের ওপর ফরয করেছেন, যে ব্যক্তি এগুলির জন্য সুন্দরভাবে অজু করবে, ওয়াক্ত মোতাবেক নামাজ আদায় করবে, রুকু ও খুশূ-খুযু পূর্ণ করবে, তাকে ক্ষমা করার জন্য আল্লাহর অঙ্গীকার রয়েছে। আর যে ব্যক্তি এগুলো করবে না, তার জন্য আল্লাহর কোনো অঙ্গীকার নেই। তিনি ইচ্ছা করলে তাকে ক্ষমা করতে পারেন, ইচ্ছে করলে আজাব দিতে পারেন। (আহমাদ, আবু দাউদ, মালেক, নাসাঈ, মিশকাত হা/৫৭০)
আরও পড়ুন: কম কথা বলার উপকারিতা এবং হাদিসের বার্তা!
**********
প্রিয় পাঠক, এই ছিল— নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত। আশা করি, লেখাটি আপনাদের ভালো লেগেছে। ভালো লাগলে দ্বীনি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। আর নিয়মিত ইসলামিক পোস্ট পড়তে হাদিস ঘর সাইটে চোখ রাখুন। ধন্যবাদ।