প্রিয় পাঠক, আসসালামু আলাইকুম। আশা করি, আপনারা সবাই আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। এর আগের পোস্টে আমরা— “নামাজের ফরজ কয়টি ও কী কী?” সম্পর্কে জেনেছিলাম। আজকের পোস্টে আমরা— নামাজের ওয়াক্ত সমূহ, নিষিদ্ধ সময় ও নিষিদ্ধ স্থান; এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। আমরা জানি, নামাজ একজন মুসলমানের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, আমাদের সকলের নামাজের ওয়াক্ত সমূহ, নিষিদ্ধ সময় ও নিষিদ্ধ স্থান সম্পর্কে সঠিকভাবে জানা প্রয়োজন। অন্যথায় আমাদের নামাজ ভুল হয়ে যেতে পারে, ফলে আমরা নেকি পাওয়ার বদলে গুনাহর ভাগীদার হব। আর আমাদের জান্নাতের রাস্তা কঠিনতর হয়ে উঠছে। কারণ, আমরা জানি- নামাজ বেহেশতের চাবিকাঠি। তাই চলুন, বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
নামাজের ওয়াক্ত সমূহ, নিষিদ্ধ সময় ও নিষিদ্ধ স্থান
নামাজের ওয়াক্ত সমূহ
আল্লাহর নির্ধারিত সময়ে আমাদের দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া / সালাত আদায় করা ফরজ। আল্লাহ বলেছেন, “মুমিনদের ওপর ‘নামাজ’ নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্ধারিত করা হয়েছে!” (আল কোরান : সূরা নিসা ৪/১০৩)। মিরাজের রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার পরের দিন যোহরের সময় জিবরীল (আঃ) এসে প্রথম দিন আউয়াল ওয়াক্তে ও পরের দিন আখেরি ওয়াক্তে নিজ ইমামতিতে পবিত্র কাবা চত্বরের মাকামে ইবরাহীমের পাশে দাঁড়িয়ে দুই দিনে পাঁচ পাঁচ দশ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে রাসূলুল্লাহ (সা:)-কে নামাজের পছন্দনীয় সময়কাল ওই দুই সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। (আবু দাউদ হা/৩৯৩; তিরমিযী হা/১৪৯) তবে আউয়াল ওয়াক্তে সালাত আদায় করাকে রাসূলুল্লাহ (সা:) সর্বোত্তম আমল হিসাবে অভিহিত করেছেন। (আহমাদ, আবু দাউদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৬০৭)
আরও পড়ুন: নামাজের ফরজ কয়টি ও কী কী?
(১) ফজর
সুবেহ সাদিক হতে সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত ফজরের নামাজ আদায় করার সময়কাল। রাসূলুল্লাহ (সা:) সর্বদা ‘গালাস’ বা ভােরের অন্ধকারে ফজরের সালাত আদায় করতেন এবং জীবনে একবার মাত্র ‘ইসফার’ বা চারিদিকে ফর্সা হওয়ার সময়ে ফজরের সালাত আদায় করেছেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এটাই তার নিয়মিত অভ্যাস ছিল। (আবু দাউদ হা/৩৯৪)
১৯৭ অতএব ‘গালাস’ ওয়াক্তে অর্থাৎ ভােরের অন্ধকারে ফজরের নামাজ পড়াই প্রকৃত সুন্নত।
(২) যোহর
সূর্য পশ্চিম দিকে ঢললেই যোহরের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং সূর্যের আলোর বিপরীতে কোনো বস্তুর নিজস্ব ছায়ার এক গুণ হলে শেষ হয়। (মুসলিম, মিশকাত হা/৫৮১)
(৩) আসর
সূর্যের আলোর বিপরীতে কোনো বস্তুর মূল ছায়ার এক গুণ হওয়ার পর হতে আসরের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং দুই গুণ হলে শেষ হয়। তবে সূর্যাস্তের প্রাক্কালের রক্তিম সময় পর্যন্ত আসর এর সালাত পড়া জায়েজ আছে। (আবু দাউদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৫৮৩)
(৪) মাগরিব
সূর্য অস্ত যাওয়ার পরেই মাগরিবের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং সূর্যের লালিমা শেষ হওয়া পর্যন্ত মাগরিব ওয়াক্ত বাকি থাকে। (মুসলিম, মিশকাত হা/৫৮১)
(৫) এশা
মাগরিবের পর হতে এশার ওয়াক্ত শুরু হয় এবং মধ্যরাতে শেষ হয়। (মুসলিম, মিশকাত হা/৫৮১)
তবে জরুরি কারণ বশতঃ ফজরের পূর্ব পর্যন্ত এশার সালাত আদায় করা জায়েজ আছে। (মুসলিম হা/১৫৬২)
প্রচণ্ড গ্রীষ্মে যোহরের সালাত একটু দেরিতে এবং প্রচণ্ড শীতে এশার সালাত একটু আগেভাগে পড়া ভালো। তবে কষ্টবোধ না হলে এশার সালাত রাতের এক তৃতীয়াংশের পর আদায় করা উত্তম। (বুখারী, মিশকাত হা/৫৯০-৯১)
আরও পড়ুন: নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত সমূহ!
নামাজের নিষিদ্ধ সময়
সূর্যোদয়, মধ্যাহ্ন ও সূর্যাস্ত কালে সালাত শুরু করা সিদ্ধ নয়। (মুসলিম, মিশকাত হা/১০৩৯-৪০)
অনুরূপভাবে আসরের সালাতের পর হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত এবং ফজরের সালাতের পর হতে সূর্যোদয় পর্যন্ত কোন সালাত নেই। (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১০৪১)
তবে এ সময় কাজা সালাত আদায় করা জায়েজ আছে। (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১০৪৩)
বিভিন্ন হাদিসের আলোকে অনেক ইসলামিক স্কলার নিষিদ্ধ সময় গুলিতে ‘কারণ বিশিষ্ট’ সালাত সমূহ জায়েজ বলেছেন। যেমন- তাহিয়্যাতুল মসজিদ, তাহিয়্যাতুল ওক, সূর্য গ্রহণের ছালাত, জানাযার সালাত ইত্যাদি। জুম’আর সালাত ঠিক দুপুরের সময় আদায় করা কায়েজ আছে।
অমনিভাবে কাবা গৃহে দিবারাত্রি সকল সময় সালাত ও তাওয়াফ জায়েজ আছে। (নাসাঈ, আবু দাউদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/ ১০৪৫)
নামাজের নিষিদ্ধ স্থান
আবু সাঈদ খুদরী (রা:) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা:) এরশাদ করেন যে, সমগ্র পৃথিবীই সিজদার স্থান, কেবল কবরস্থান ও গােসলখানা ব্যতীত। (আবু দাউদ, তিরমিযী, দারেমী, মিশকাত হা/৭৩৭)। সাতটি স্থানে সালাত নিষিদ্ধ হওয়ার হাদিসটি যঈফ / দুর্বল হাদিস। (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মিশকাত হা/৭৩৮ আলবানী, ইরওয়া হা/২৮৭; যঈফুল জামে হা/৩২৩৫)
**********
প্রিয় পাঠক, এই ছিল— নামাজের ওয়াক্ত সমূহ, নিষিদ্ধ সময় ও নিষিদ্ধ স্থান; এই সম্পর্কে বিস্তারিত। আশা করি, পোস্টটা আপনাদের ভালো লেগেছে। ভালো লাগলে দ্বীনি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। আর প্রতিদিন নিয়ম মেনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ুন। আল্লাহ আপনাদের সবাইকে হেদায়েত দিক, আমিন। আর নিয়মিত ইসলামিক পোস্ট পড়তে হাদিস ঘর সাইটে চোখ রাখুন। জাযাকাল্লাহ খাইরান।